খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  হত্যা মামলায় মমতাজ ৪ দিনের রিমান্ডে
  নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিল শুনানি ফের বুধবার
তীব্র যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগে মানুষ

গল্লামারী সেতু : বাড়তি ১৪ কোটি টাকা আবদার ঠিকাদারের, ৮ মাস স্থবির কাজ

এ এইচ হিমালয়

খুলনা নগরীর প্রবেশদ্বার গল্লামারী মোড়ে ময়ূর নদের ওপর দুটি স্টিল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর। চলতি বছর ৩০ মার্চ সেতু দুটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ। গত ৮ মাস ধরে সেতুর কাজে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এতে প্রতিদিনই গল্লামারী মোড়ে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দুটি স্টিল সেতু এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য সড়ক বিভাগের সঙ্গে ঠিকাদারের চুক্তি মূল্য ছিল ৬৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। গতবছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সেতুর নির্মাণ ব্যয় ২০ শতাংশ অর্থ্যাৎ প্রায় ১৪ কোটি টাকা বৃদ্ধির চেষ্টা করছিলেন ঠিকাদার। ওই সময় তাদের বাড়তি টাকার বিষয়ে আশ^াসও দিয়েছিলেন সাবেক এমপি সেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলসহ আওয়ামী লীগ নেতারা। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর নেতারা পালিয়ে যান, সড়ক বিভাগেও ব্যাপক রদবদল করা হয়। সড়ক বিভাগের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা সব ধরনের বাড়তি ব্যয়ের প্রস্তাব মৌখিকভাবে নাকচ করে দিয়েছেন।

এরপর ১৫ শতাংশ হারে ১০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। মূলত বাড়তি  টাকার বিষয়ে আশ^াস না পেয়েই ৮ মাস ধরে প্রকল্প এলাকায় কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার। তাদের নিজস্ব ইয়ার্ডে সেতুর স্টিলের কাঠামোর কাজ চললেও তাতে গতি নেই।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিগত বছরগুলোতে নানা অজুহাতে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। খুলনা শেরে বাংলা সড়ক ৪ লেন প্রকল্পেও ৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়েছিলেন ঠিকাদার। আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশে এই ব্যয় বাড়ানো হতো। একই পদ্ধতিতে গল্লামারী সেতুর ব্যয় বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল।

সড়ক বিভাগ থেকে জানা গেছে, নগরীর গল্লামারী মোড়ে ময়ূর নদের ওপর পাশাপাশি দুটি সেতু হবে। ৬৮ দশমিক ৭ মিটার লম্বা ও ২৩ মিটার প্রশস্ত সেতু দুটির মূল অবকাঠামো হবে স্টিলের। দেখতে অনেকটা রাজধানীর হাতির ঝিলের আদলে নির্মাণাধীন সেতু দুটি নদী থেকে ৪ মিটার উচু হবে। সেতু নির্মাণের জন্য ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংকে (এনডিই) কার্যাদেশ দেয় সড়ক বিভাগ। চুক্তির আওতায় স্টিলের দুটি সেতু এবং সেতুতে যানবাহন ও পথচারীদের ওঠানামার জন্য দুই পাশে প্রায় ৭৫০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে। ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর পুরাতন সেতুটি ভাঙার কাজ শুরু করে ঠিকাদার। ওই বছরই নতুন সেতুর কাজ শুরু হয়। কিন্তু গতবছর আগস্টের পর থেকে দৃশ্যমান সব কাজ থমকে গেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর পাড়ে পাইলিংয়ের জন্য সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে রিং। মরিচা ধরেছে রডে। সেতুটি দাঁড় করাতে দুটি অ্যাবটমেন্টের (কংক্রিটের স্তর) মধ্যে দেখা মেলে একটির। সংযোগ সড়ক নির্মাণের কোনো তৎপরতা নেই। বর্তমানে ২১ ফুট প্রশস্ত একটি সেতু দিয়ে প্রতিদিন ১৫/২০ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। এতে সেতুর দুই পাশেই তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে।

তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রকৌশলী সেলিম রেজা দাবি করেন, সেতুর কাজ বন্ধ নেই। মোট ৬৪টি পাইলের মধ্যে ৩২টি আর চারটি পাইল ক্যাপের মধ্যে দুইটির কাজ শেষ হয়েছে। গতবছর থেকে প্রকল্প ইয়ার্ডে স্টিলের অবকাঠামোর কাজ চলছে। নকশা পেতে দেরি হওয়ায় কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিল। কাজ শেষ হলে সেটি কংক্রিটের কাঠামোর ওপর স্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পের নকশার সঙ্গে বাস্তবতার মিল ছিল না। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের বেশি কাজ করতে হয়েছে। তখন বলা হয়েছিল, পরে বিল সমন্বয় করা হবে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় জটিলতা দেখা দেয়। এখন সব কেটে গেছে।

সড়ক বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারকে কাজ করতে হবে। কাজ শেষে সব পরিমাপ করে এরপর অন্য বিষয়। এর ব্যতয় হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্য তারা প্রস্তাবে রাজি হয়ে দ্রুত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তিনি বলেন, সেতুর নকশাসহ সবকিছু অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় কাজ বন্ধ থাকলেও ঠিকাদারের ইয়ার্ডে সেতুর স্টিল কাঠামোর কাজ চলছে। খুব দ্রুত কাজ শেষ হবে।

 

খুলনা গেজেট/হিমালয়




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!